ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) মূলত এমন একটি পেশা যেখানে আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এটি সাধারন চাকরির মতোই, কিন্তু ভিন্নতা হলো এখানে আপনি আপনার স্বাধীন মতো কাজ করতে পারবেন।
দেখা গেলো আপনার এখন কাজ করতে ইচ্ছা করছে না; আপনি করবেন না। যখন ইচ্ছা করবে তখন আবার চাইলেই করতে পারবেন। ধরাবাঁধা কোনো অফিস টাইম নেই। এরপরে এখানে আপনার নির্দিষ্ট কোনো ইমপ্লয়ার (Employer) নেই। যখন যে বায়ারের কাজ নিবেন তখন সে-ই আপনার ইমপ্লয়ার (Employer)।
সাধারন চাকরি থেকে এখানে আরেকটি বিষয়-এর ভিন্নতা আছে। সেটি হলো কাজের স্থান। ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) এর নির্দিষ্ট কোনো অফিস নেই। মূলত আপনার বাড়িই হচ্ছে আপনার অফিস।
এখানে বসেই আপনি বিভিন্ন দেশের বায়ারদের সাথে কাজ করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) এর ক্ষেত্রে খুব সহজেই সরকারি বেসরকারি অনেক চাকরির থেকে বেশি বেতনে কাজ করতে পারবেন আপনার যদি যথেষ্ট পরিমাণে দক্ষতা থাকে।
এটা আমরা সবাই জানি যে, আমাদের দেশে দক্ষতার কদর হয় না সেভাবে; কিন্তু বাইরের দেশ গুলোতে হয়। আপনি সেসব দেশের বায়ারদের সাথে কাজ করে বাংলাদেশের তুলনায় দ্বিগুণ/তিনগুণ অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
কি কি দক্ষতা লাগবে ফ্রিল্যান্সিং করতে? (What are the skills do you need for Freelancing?)
অনেকেরই কনফিউশন থাকে যে আসলেই কি আমি ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) করতে পারবো? কি কি জিনিস দরকার এই কাজের জন্য? আসলে সত্যি কথা বলতে তেমন কিছুই লাগবে না আপনাকে এই পেশা শুরু করার জন্য। প্রথম যে জিনিসটা আপনার লাগবে সেটি হলো ইচ্ছাশক্তি ও ধৈর্য্য। এগুলো থাকলেই আপনি এই সেক্টরে নিমিষেই সফল হবেন।
এর পাশাপাশি আপনার দরকার হবে ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগের দক্ষতা এবং কাজ চালানোর মতো ইংরেজি জানা। ইন্টারনেট সম্পর্কিত ভালো ধারনা ও গুগল এবং ইউটিউব থেকে বিভিন্ন রিসোর্স খুঁজে বের করার দক্ষতা এক্ষেত্রে আপনাকে অনেক সহায়তা করবে। এই ছিল মুলত প্রয়োজনীয় বিষয়াবলী যা আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য যোগ্য করে তুলবে।
কিভাবে শুরু করবেন ফ্রিল্যান্সিং? (How to start Freelancing)
Afrad Academy
এটা সকলেরই প্রশ্ন যে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন। তো এই পেশায় ঢোকার জন্য আপনাকে প্রথমেই একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার যে কাজে আগ্রহ সব থেকে বেশি সে কাজটি বেছে নিবেন।
এর ফলে আপনি কাজ করে যেমন মজা পাবেন, তেমন অনেক দূর যেতে পারবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত সেক্টরটিতে। যেমন ধরুন আপনি ওয়েব ডিজাইন (Web Design) সেকশনটা বেছে নিলেন ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য। এই কাজটি কিন্তু ক্রিয়েটিভ মানুষদের কাজ। সবার দ্বারা ডিজাইন করা সম্ভব নয়।
তো এটি বেছে নেওয়ার পূর্বেই আপনি দেখবেন যে, এই কাজটি আপনি কেমন পারছেন, কেমন আগ্রহ আপনার এই ওয়েব ডিজাইন এর উপর। যদি দেখেন সব কিছু ঠিকঠাক, সেক্ষেত্রে এটিকে নির্ধারিত করে এই রিলেটেড যত কাজ আছে সব শিখবেন। যেমন: ওয়েব ডিজাইন , ওয়েব ডেভেলপার , অ্যাপ ডেভেলপার ,UI/UX ডিজাইন, ইত্যাদি।
তো আপনি কি একজন ওয়েব ডিজাইনার হবার কথা ভাবছেন তাহলে এই কোর্সটি আপনার জন্য কারণ Afrad Academy কোর্সে একদম নতুন থেকে শুরু করা হবে, যারা ওয়েব ডিজাইন সম্পর্কে কোন রকম ধারণা নেই তারা আজই শুরু করতে পারেন আপনিও হতে পারবেন একজন ওয়েব ডিজাইন এবং বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে কাজ করে আপনিও হতে পারেন একজন ফ্রিল্যান্সার।
নতুনরা কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় আসতে পারে
আমি যদি পূর্ববর্তী কথা আজকে চিন্তা করি তাহলে ভাবতেই অবাক লাগে সেই সময় আমরা কিভাবে কাজ করতাম আর কিভাবে কাজগুলি শিখেছিলাম। কিছু বছরের ব্যবধানে আজকে নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং এর জগতে আসাটা যতোটা সহজ হয়েছে, সেটি আসলে বলার মতো নয়।
সেই সময়, বেশি মানুষের বাসায় কম্পিউটারই ছিল না। বর্তমানে প্রায় সবার বাসায় কম্পিউটার আছে এটি এখন অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছে। তাই ফ্রিল্যান্সিং এর জগতে নতুনদের আসতে এখন আর খুব বেশি কোনো সমস্যা হয় না।
তবে একটি বিষয় অবশ্যই চিন্তা করা প্রয়োজন। ফ্রিল্যান্সিং এমন কোনো পেশা নয় যেখানে আপনি এক মাস কাজ করলেই খুব ভালো আয় করতে পারবেন। আপনাকে ধৈর্য্য সহকারে কাজ করে যেতে হবে। পথটা দুর্গম ও কষ্টকর হলেও আপনার ইচ্ছাশক্তি ও মনোবল থাকলে এটি কোনো সমস্যা হবে না আপনার জন্য।
কিভাবে শিখবেন ফ্রিল্যান্সিং?
এই বিষয়টিতে অনেকেই ভুল করে থাকেন। বিষয়টি একটি উদাহরণের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করি। ধরুন আপনি আপনার একাডেমিক পড়াশোনা করে একটি ব্যাংকে ব্যাংকার হিসেবে যোগদান করলেন। অন্যদিকে আপনারই আরেকজন বন্ধু একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে একাউন্টেন্ট হিসেবে যোগদান করলো।
আমি যদি বলি আপনারা দু’জনেই চাকরিজীবী; কথাটি কি তাহলে মিথ্যা বলা হবে? না, এটি মিথ্যা হবে না। আবার আমি যদি বলি আপনি একজন ব্যাংকার এবং আপনার বন্ধু একজন একাউন্টেন্ট, তাহলে কি কথাটি মিথ্যা হবে? না, তাও হবে না।
উপরের দু’টি কথাই একদম নির্ভুল ও নির্ভেজাল খাঁটি সত্য কথা। আসলে বিষয়টি হচ্ছে আপনাদের দু’জনের পদবী ভিন্ন হলেও আপনারা দু’জনেই চাকরিজীবী।
একইরকমভাবে ফ্রিল্যান্সিং জগতেও কেউ হচ্ছেন গ্রাফিক্স ডিজাইনার, কেউ ওয়েব ডিজাইনার আবার কেউবা ডিজিটাল মার্কেটার। প্রত্যেকের পদবী ভিন্ন কিন্তু সবাই ফ্রিল্যান্সার।
এখন আমি যদি আপনাকে প্রশ্ন করি যে কিভাবে চাকরি করা শেখা যায় – এর কি কোনে সদুত্তর আপনার কাছে আছে? নিশ্চয়ই নেই।
একই রকমভাবে ফ্রিল্যান্সিং আসলে শেখার মতো কিছু নেই। আপনাকে নির্দিষ্ট কোনো একটি কাজে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তাহলেই আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা
ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করে শেষ করা যাবে না। তারপরও সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলো নিচে বর্ণনা করা হলোঃ
সময়ের স্বাধীনতা
আগেই বলা হয়েছে যে, এ কাজে আপনার সুবিধা অনুযায়ী সময়ে আপনি কাজ করতে পারবেন। এর পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার উপরে। আপনি যদি চান আপনি এখন কাজ করবেন না, আপনাকে কেউ জোর করবে না এখন কাজ করতে।
কাজের স্বাধীনতা
আপনি নিজেই নিজের কাজ বেছে নিতে পারবেন। আপনার যে কাজটি সব থেকে ভালো লাগে সেটিকে বেছে নিতে পারবেন ও চাইলে যতদিন ইচ্ছা ওই কাজ করে যেতে পারবেন।
নিজের বেতন নিজে ঠিক করা
আপনার নিজের পেমেন্ট রেট (Payment Rate) আপনি নিজে বেছে নিতে পারবেন। প্রায় প্রত্যেকটা মার্কেটপ্লেসেই নিজের পেমেন্ট রেট উল্লেখ করার সুযোগ রয়েছে। আপনি যত বেতনে কাজ করতে চান সেটি অনুযায়ী কাজ পাবেন এখানে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করা সুযোগ
ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কাজ না করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বা বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করতে পারবেন। এক্ষেত্রেও ক্লায়েন্ট (Client) বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচন পুরোটাই আপনার নিজের উপরে।
দলগত কাজের সুযোগ
একক ভাবে কাজের পাশাপাশি এখানে আপনারা দলগত কাজেরও সুযোগ পেয়ে যাবেন।
পড়ালেখার পাশাপাশি কাজের সুযোগ
এই পেশাটি আপনি চাইলে ফুল টাইমও (Full Time) নিতে পারেন আবার পার্ট টাইম (Part Time) হিসাবেও কাজ করতে পারেন। তাই ছাত্র থাকা অবস্থায়ও এই কাজ আপনি করতে পারবেন বিনা ঝামেলায়।
নিজের মন মতো কাজের পরিবেশ
আপনি চাইলেই নিজের ইচ্ছা মতো ওয়ার্কস্টেশন (Workstation) বানিয়ে নিতে পারবেন কাজ করার জন্য। আপনার কাজের জায়গা আপনি নিজেই তৈরি করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) এর অসুবিধা
ফ্রিল্যান্সিং এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ এক্ষেত্রে। চলুন দেখে নিই এর অসুবিধাগুলোওঃ
ফ্রিল্যান্সেরদের (Freelancer) দীর্ঘ সময় একই জায়াগায় বসে কাজ করতে হয়। এজন্য কোমর, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাথা সহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
কম্পিউটার এর সামনে একটানা অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফ্রিল্যান্সারদের চোখের সমস্যা দেখা যায়।
এক্ষেত্রে সব কাজ বাসায় বসে করতে হয়। এর ফলে একাকীত্বের মাধ্যমে মানুষ অবসাদগ্রস্ত হয়ে যায় যেটি পরবর্তীতে বড় রুপ ধারন করতে পারে।
প্রায়শই ঘুমের নানা রকম সমস্যায় সম্মুখীন হন ফ্রিল্যান্সাররা। কারন দেখা যায় আমাদের দেশে যখন রাত, ক্লায়েন্টের দেশে তখন দিন।
বাইরে তেমন বের না হওয়ার কারনে রোদের স্পর্শ পায় না তেমন এই পেশার লোকজন। সেক্ষেত্রে ভিটামিন ডি এর অভাব হওয়াটা ব্যতিক্রম কিছু না।